krishideal.com

, ি িি ি ি ি িি ি ি িিি ি ি

বন্যায় নিরাপদ থাকতে কি করণীয়?

বাংলাদেশে বন্যা একটি সাধারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা প্রায় প্রতি বছরই ঘটছে। দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, নদীর সংখ্যা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বন্যার প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করে। বন্যা শুধু মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে না, বরং সম্পদ, ফসল, অবকাঠামো, এবং পরিবেশেরও ব্যাপক ক্ষতি করে। তাই বন্যার সময় কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়, সেই সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিবন্ধে বন্যায় নিরাপদ থাকার কিছু করণীয় এবং প্রস্তুতির উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।

বন্যার পূর্ববর্তী প্রস্তুতি

বন্যা আসার আগেই কিছু পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং নিরাপদ থাকা সহজ হয়। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতির পরামর্শ দেওয়া হলো:

১. বন্যার পূর্বাভাস এবং খবরের প্রতি সতর্ক থাকা

প্রতিদিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও খবরের দিকে নজর রাখা জরুরি। সরকার এবং আবহাওয়া দপ্তরের মাধ্যমে বন্যার সম্ভাবনা সম্পর্কে আগাম তথ্য পাওয়া যায়। স্থানীয় রেডিও, টেলিভিশন, বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বন্যার পূর্বাভাস জানতে হবে এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

২. জরুরি সামগ্রীর সংগ্রহ

বন্যার পূর্বেই একটি জরুরি সামগ্রীর তালিকা তৈরি করে তা সংগ্রহ করা উচিত। এসব সামগ্রীর মধ্যে থাকতে পারে:

  • শুকনো খাবার ও পানীয় জল
  • প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী
  • টর্চ লাইট এবং অতিরিক্ত ব্যাটারি
  • মোবাইল ফোন ও পাওয়ার ব্যাংক
  • জরুরি প্রয়োজনীয় পোশাক এবং কাগজপত্র (যেমন, জন্ম সনদ, আইডি কার্ড)

৩. বাড়ি ও সম্পত্তি রক্ষা

যদি আপনার বাড়ি বন্যা-প্রবণ এলাকায় অবস্থিত হয়, তবে ঘরের মূল্যবান জিনিসগুলো উঁচু স্থানে সরিয়ে রাখা উচিত। ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পানি থেকে রক্ষা করার জন্য পলিথিন বা ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগে সংরক্ষণ করা ভালো।

৪. জরুরি নম্বর সংগ্রহ করা

বন্যার সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে পারে, তাই স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, স্বাস্থ্যসেবা, এবং ত্রাণ সহায়তা সেন্টারের জরুরি ফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখতে হবে। এছাড়া, পরিবার বা বন্ধুদের সাথে যোগাযোগের বিকল্প ব্যবস্থা রাখা ভালো।

বন্যার সময় করণীয়

বন্যার সময় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জীবন রক্ষা করতে পারে। বন্যার সময় কীভাবে নিরাপদে থাকা যায় তা নিচে আলোচনা করা হলো:

১. উঁচু স্থানে আশ্রয় নেওয়া

বন্যার পানি বাড়তে শুরু করলে প্রথম করণীয় হলো উঁচু স্থানে যাওয়া। গ্রামাঞ্চলে সাধারণত উঁচু বাঁধ, স্কুল, বা ত্রাণকেন্দ্র থাকে, যেখানে আশ্রয় নেওয়া যায়। শহরাঞ্চলে উঁচু ভবন বা অন্যান্য নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়া উচিত।

২. বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা

বন্যার সময় ঘর বা আশ্রয়স্থলে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলে তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। পানি এবং বিদ্যুৎ একসাথে থাকলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা মারাত্মক বিপদের কারণ হতে পারে। তাই বাড়ির বিদ্যুৎ মিটার এবং প্লাগগুলো বন্ধ রাখতে হবে।

৩. পানির সংস্পর্শ এড়ানো

বন্যার সময় রাস্তার পানি দূষিত ও সংক্রামক হতে পারে। বন্যার পানি সবসময় দূষিত হয়ে থাকে, যা ত্বকের রোগ, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, এবং অন্যান্য পানিবাহিত রোগের কারণ হতে পারে। তাই বন্যার পানিতে হাঁটা বা চলাচল থেকে বিরত থাকা উচিত।

৪. নৌকা বা অন্যান্য সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার করা

যদি আপনার এলাকায় বন্যার পানি দ্রুত বাড়তে থাকে এবং কোনো নিরাপদ স্থানে যেতে না পারেন, তাহলে নৌকা বা অন্যান্য সুরক্ষা উপকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। লাইফ জ্যাকেট বা প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করে ভাসার ব্যবস্থা রাখা ভালো।

৫. সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা

সরকার বা স্থানীয় প্রশাসন থেকে যদি কোনো সতর্কবার্তা বা নির্দেশনা দেওয়া হয়, তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। ত্রাণ শিবিরে যাওয়ার জন্য বা নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের জন্য যে নির্দেশনা দেওয়া হয়, তা অনুসরণ করা উচিত। কোনো গুজবে কান না দিয়ে শুধুমাত্র সরকারি ঘোষণা এবং সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর নির্ভর করতে হবে।

বন্যার পর করণীয়

বন্যা চলে যাওয়ার পরপরই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে বন্যার পরবর্তী সমস্যাগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া যায়:

১. বিশুদ্ধ পানি ও খাবার গ্রহণ

বন্যার পর পানির সঙ্কট দেখা দিতে পারে। তাই শুধুমাত্র বিশুদ্ধ বা সুরক্ষিত পানি পান করতে হবে। প্যাকেটজাত বা ফুটানো পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে। বন্যার সময় বা পরে খাবার আগে হাত ধোয়া এবং শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা উচিত।

২. ঘরবাড়ি পরিষ্কার করা

বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ঘরের ভেতর ও আশেপাশের স্থান পরিষ্কার করতে হবে। পানি জমে থাকলে তা দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে। মাটিতে বা জলে থাকা পোকামাকড়ের কারণে মারাত্মক রোগ ছড়াতে পারে, তাই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. মেডিক্যাল চেকআপ

বন্যার পর রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো উচিত। বন্যার পানি থেকে ত্বকে সমস্যা, ডায়রিয়া বা অন্যান্য রোগের লক্ষণ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

৪. সরকারি সহায়তা এবং পুনর্বাসন

বন্যার পর ত্রাণ এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা গ্রহণ করা উচিত। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি, জমি, ও ফসল পুনরুদ্ধার করতে সরকারি সহায়তা এবং ঋণ সুবিধা সম্পর্কে খোঁজ নিতে হবে।

উপসংহার

বন্যার সময় এবং পরে নিরাপদ থাকা এবং ক্ষতি কমানোর জন্য পূর্ব প্রস্তুতি এবং সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। বন্যার প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে অবশ্যই সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *